জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছাকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ।। জ্ঞানের সন্ধানে।। পেইজটি। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে। সর্বশেষে ।। জ্ঞানের সন্ধানে।। পেজ এর পক্ষ হতে আপনাকে স্বাগতম জানাই।

সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৪

১০ টি স্বচ্ছ প্রানী

আসলে পৃথিবীতে এমন অনেক প্রাণী আছে যারা কি-না দেখতে স্বচ্ছ; ঠিক আমাদের গল্পে পড়া ভূতের মতো। আপনি হয়ত এদেরকে দেখে ভূতই ভাববেন! তবে অবাক হয়ে বসে না থেকে চলেন এমন কিছু প্রাণী সম্পর্কে জেনে নিই।


ভূত চিংড়ি
প্রায় স্বচ্ছ এই জলজ প্রাণীটির আবরণ এতটাই স্বচ্ছ যে অনেক সময় গ্লাস অ্যাকুরিয়ামের ভিতরে এদের খুঁজেই পাওয়া যায় না! দেখে মনে হয় যেন অ্যাকুরিয়ামই দেখছি, এতটাই স্বচ্ছ এই চিংড়ির দেহ। পৃথিবীর দুর্গম অনেক নদী ও হ্রদে এই বিচিত্র প্রজাতির চিংড়ি দেখতে পাওয়া যায়।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরা যখন রঙিন খাবার খায় কেবল তখনই এদের দেখতে পাওয়া যায়। যে খাবারগুলো ওরা খায় সেগুলো স্পষ্ট দেখা যায় বাইরে থেকে! সাধারণত এরা সবুজ উদ্ভিদ খেয়ে থাকে, তাই রঙটাও সবুজই দেখা যায় ওর দেহের ভিতর।


কাচ ব্যাঙ
যারা একটু বড় হয়ে গেছ, তাদের অনেকের চোখের সামনেই হয়ত এখন স্কুল-কলেজে জীববিজ্ঞান ল্যাবে বসে কাটা ব্যাঙের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের এই প্রজাতির ব্যাঙটা কিন্তু দেখতে একটু অন্যরকম! এদের অনেক প্রজাতির পেটের দিকের চামড়াটা একটু বেশিই স্বচ্ছ। তাই দেখে মনে হবে বাইরে থেকেই তুমি ওর দেহের ভিতরের সবকিছু, যেমন হৃৎপিণ্ড, যকৃত ইত্যাদি দেখে ফেলছ! এজন্যেই এদের বলা হয় “গ্লাস ফ্রগ” বা “কাচ ব্যাঙ”।প্রধানত মধ্য আর দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ সময় এরা গাছেই বসবাস করে।


কাচপাখা প্রজাপতি
প্রজাপতি নিশ্চয়ই সবার পছন্দ? আর সেই প্রজাপতির যদি বাহারি পাখা থাকে, তাহলে তো আর কথাই নেই! কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছ কি, যদি পাখাগুলোর কোনো রঙ না থাকত, তবে কেমন হত?
তোমাদের ভাবনার উত্তর নিয়ে স্বচ্ছ পাখা মেলে বসে আছে এই গ্লাসউইং প্রজাপতি। এদের একটা স্প্যানিশ নাম আছে, espejitos যার অর্থ হল 'ছোট আয়না'।
এদের পাখার চারদিকে অস্বচ্ছ একটা সীমানা আছে তাই রক্ষে, নাহলে ওদের তো দেখাই যেত না।
প্রাপ্তবয়স্ক প্রজাপতির দল অনেক সময় দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দেয় নতুন বাসস্থানের খোঁজে। পুরুষ প্রজাপতিরা নিজ নিজ শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের জন্য অনেক সময়ই বড় দলবল নিয়ে চলাফেরা করে।


কাচ অক্টোপাস
এই অবিশ্বাস্য অক্টোপাসটি সম্পর্কে খুব অল্পই জানা যায়। কিন্তু পৃথিবীর ক্রান্তীয় ও প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের পানিতে এদের হরহামেশা দেখা যায়।
এদের চামড়া স্বচ্ছ হওয়ায় বিজ্ঞানীরা বের করতে পেরেছেন যে, এদের চোখের অপটিক লোবে অনেক লম্বা লম্বা স্নায়ুতন্তু আছে। তাই এরা অনেক প্রখর দৃষ্টিশক্তি অধিকারী হয়। এদের দেখতে হলে তোমার দৃষ্টিও অনেক স্বচ্ছ হতে হবে, হাজার হোক-এরা ভুতূড়ে অক্টোপাস তো, তাই না?


ক্রোকোডাইল আইসফিস
এই ভূতুড়ে শিকারিদের বাস আটলান্টিক মহাসাগরে। এদের সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপারটি হচ্ছে যে এদের রক্তই প্রায় অদৃশ্য। আমরা যারা মেরুদণ্ডী প্রাণী, তাদের সবার রক্তে আছে হিমোগ্লোবিন নামে একটি উপাদান। এই উপাদানের জন্যই আমাদের রক্তের রঙ লাল হয়। এরাই একমাত্র মেরুদণ্ডী প্রাণী, যাদের রক্তে কোনো হিমোগ্লোবিন নেই। তোমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে, এরা কীভাবে হিমোগ্লোবিন ছাড়া বেঁচে থাকে? এদের বসবাস গভীর সাগরে, যেখানে পানির তাপমাত্রা শূন্য বা তারও নিচে। ঠাণ্ডা পানিতে সাধারণ পানির চেয়ে বেশি অক্সিজেন থাকে। তাই এদের তেমন সমস্যা হয় না। 


কচ্ছপ খোলসের গুবরেপোকা
এই গুবরেপোকাটা কিন্তু পুরোপুরি স্বচ্ছ না, কিন্তু এর দেহের বাইরের দিকে একটা প্রায় স্বচ্ছ খোলস আছে। এই খোলসের সাহায্যে এরা শিকারিদের বোকা বানিয়ে থাকে। দেখতেই পাচ্ছ, এর পিঠে আজব আঁকিবুঁকি আছে। এগুলো একটা সতর্কতা সংকেত হিসেবেও কাজ করে শত্রুদের জন্য।
এদের নানা প্রজাতি আছে, আর এদের খোলসে বিভিন্ন রকমের ডিজাইন দেখা যায়। 


সালপাস
প্রথম দর্শনে কিন্তু এদের দেখে জেলিফিশ ভেবে ভুল করতে পার। স্বচ্ছ এই প্রাণীগুলো মুক্তাবস্থায় ভাসতে থাকে। জেলি ভর্তি দেহ নিয়ে এরা সাঁতরায়। সাঁতরানোর সময় পানি শরীরের ভেতরে নিয়ে যায়, আবার বের করে দেয়। ওরা আসলে সাঁতরানোর সময়ই খাওয়া-দাওয়া করে।
পৃথিবীর প্রায় সব সাগরেই এদের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু দক্ষিণ দিকের সাগর গুলোয় একটু বেশি দেখা যায় এদের। 



স্বচ্ছ সামুদ্রিক শসা
এই প্রাণীটিকে কিন্তু খুব সাম্প্রতিককালে আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। এরা এতটাই স্বচ্ছ যে, এদের পরিপাকতন্ত্র পর্যন্ত বাইরে থেকে দেখা যায়!
পানির প্রায় ২ হাজার ৭৫০ মিটার গভীরে এদের বাস। যখন এ প্রাণীকে আবিষ্কার করা হয়েছিল, তখন এরা শুঁড়ের সাহায্যে প্রতি মিনিটে প্রায় ২ সেন্টিমিটার গতিতে সাঁতার কাটছিল। সাঁতরানোর সময়ই এরা আবর্জনা ভর্তি পলিমাটি খেয়ে নিচ্ছিল। শুনে কেমন কেমন মনে হলেও, ওদের খাদ্যই যে এটা! 



কাচের স্কুইড
কাচের স্কুইডের প্রায় ৬০টির মতো প্রজাতি আছে। এদের অনেকগুলোই পুরোপুরিভাবে স্বচ্ছ। এরা জীবনের অধিকাংশ সময় কাটায় অগভীর পানিতে, যেখানে সূর্যালোক পাওয়া যায়। তাই অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে এদের একটু বেশি ঝুঁকিতে থাকার কথা। কিন্তু দেহ স্বচ্ছ হওয়ায় ওদের দেখতে পায় না ওদের শিকারিরা, তাই বেশ নিরাপদেই ঘুরে বেড়ায় ওরা! অনেক প্রজাতির চোখের নিচে আবার এমন সব অঙ্গ থাকে যেগুলো থেকে আলো বের হয়। ছবি দেখেই বুঝতে পারছ, এর পরিপাক গ্রন্থিগুলো সবসময়ই দৃশ্যমান থাকে।


জেলিফিশ
স্বচ্ছ প্রাণীদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত এবং বিখ্যাত প্রাণী হল জেলিফিশ। প্রাণিজগতের নিডারিয়া পর্বের এ প্রাণীটি একাকী সাঁতরে বেড়াতে পছন্দ করে। এদের দেহে এক ধরনের বিষাক্ত কাঁটা আছে, যেগুলো অন্য সাঁতারুদের জন্য ভয়াবহ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু এদের স্বচ্ছ শরীরের কারণে এদেরকে সাগরের সবচেয়ে সুন্দর প্রাণীদের একটি বলে ধরা হয়।

সম্পাদনায়ঃ দুরন্ত পথিক