আসামের কাছাড় জেলার জৈন্তিয়া পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটি গ্রাম জাতিংগা। এখানে মূলত উপজাতিদের বাস।এখানে বহুকাল আগে থেকেই প্রতি বছর বিস্তর পাখি এসে আগুনে ঝাঁপ দেয়।
এই আগুন কারা দেয়? নভেম্বর মাসে এখানকার উপজাতিরা জঙ্গলের নির্দিষ্ট জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এই আগুন দেখে পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এসে আত্মাহুতি দেয়। এর কারণ কী? কেউ জানে না।
পাখিরা যখন দলে দলে আগুনে পড়ে তখন স্থানীয় অধিবাসীরা লাঠিপেটা করে পাখিদের মারে এবং ভোজ উৎসবে মেতে ওঠে সবাই। পাখির আত্মাহুতির কী রহস্য, তার কিনারা করা যায়নি। যেসব পাখি এখানে আত্মহত্যা করতে আসে, তারমধ্যে আছে নিশিবক, হরিয়াল, বাঁশঘুঘু, কালিজ, সাদা বুক মাছরাঙা, লাল মাছরাঙা, দামা, পাহাড়ি তিতির ইত্যাদি।
কিছু পাখি আছে, যারা পুরো শীতকালটা ঘুমিয়ে কাটায়। আমেরিকার এক প্রজাতির নাইটজার (বাংলা নাম রাতচরা বা দিনেকানা) পাহাড়ের গুহায় ঘুমিয়ে শীত কাটায়। একটানা প্রায় আড়াই-তিন মাস ঘুমিয়ে ওরা বসন্তকালে জেগে ওঠে। তখন শুরু হয় সংসার গড়ার কাজ।
ক্যালিফোর্নিয়ার পাইনবনে পাইনের ফল খায় যেসব কাঠঠোকরা, তারা শীতকালের জন্য খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে। এসব ওরা কোথায় জমায়? এ আর এক মজার ঘটনা। তারা গাছের বাকলে ঠোঁট দিয়ে ঠুকরিয়ে ছোট ছোট ফুটো করে। সেখানেই তারা পাইনবীজ ঢুকিয়ে রাখে। শীতের সময় যখন পাইনফল থাকে না, তখন তা বের করে করে খায়। আরও মজার ঘটনা হচ্ছে, এক কাঠঠোকরার খাবার অন্য কাঠঠোকরা খায় না। নিজ নিজ গাছ চিহ্নিত করে রাখে নিজেরা। আবার সঞ্চিত খাদ্য রক্ষাও করে তারা। আমেরিকার লালশির কাঠঠোকরা আরও এক ধাপ এগিয়ে। তারা বাকলের ফুটোতে পাইনবীজ রেখে নরম কাঠের ঠুকরো দিয়ে ফুটো বন্ধ করে রাখে।
আমাদের দেশের দাঁড়কাককে চেনে না, এমন কেউ নেই। ওরা খুব বন্ধুপ্রিয়। সারাদিন ওরা দুজন এক সঙ্গে ঘুরোঘুরি করে, এক সঙ্গে খায়, এক সঙ্গে বিশ্রাম নেয়। দাঁড়কাকের কোনো সঙ্গী যদি মারা যায়, অন্যটি কিন্তু আর কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতায় না। সঙ্গীহারাটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একাই থাকে। দেখা যায়, দিনের আহার শেষে দুপুরে যখন সে বিশ্রাম নেয়, তখন সে এমনভাবে ডাকে, যেন কাঁদে। এটি আসলেই কান্না। তা মানুষের মনকেও শোকাতুর করে দেয়।
সবচেয়ে বেশি উড়তে পারে কোন পাখি? এর উত্তর খুব সোজা নয়। আর্কটিক টার্ন নামের এক ধরনের সামুদ্রিক পাখি আছে, যার সমকক্ষ কেউ নেই ওড়ার বেলায়। উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুতে আসতে সে একটানা ৭ হাজার ২০০ মাইল অতিক্রম করে। আবার নিজ বাড়িতে ফেরার সময় সে একই পথ পাড়ি দেয়।
ওয়েলসের একটি বাসা থেকে একটি শেয়ার ওটার (এক ধরনের হাঁস) ধরা হল। হাঁসটি ধরে নিয়ে যাওয়া হল আটলান্টিকের ওপারে ম্যাসাচুসেটসে। ওয়েলস থেকে ম্যাসাচুসেটসের দূরত্ব ৩ হাজার ২০০ মাইল। ম্যাসাচুসেটসে এনে ছেড়ে দেওয়া হয় হাঁসটিকে। দেখা যায় ১২ দিন পর হাঁসটি ঠিকই তার নীড়ে ফিরে এসেছে। অথচ সে পথে হাঁসটি কোনোদিন ওড়েনি। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার মতো হাঁসও নয় সে। তবে সে কী করে ফিরে এল? এ রহস্যেরও কিনারা হয়নি এখনও।
সম্পাদনায়ঃ দুরন্ত পথিক