জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছাকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ।। জ্ঞানের সন্ধানে।। পেইজটি। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে। সর্বশেষে ।। জ্ঞানের সন্ধানে।। পেজ এর পক্ষ হতে আপনাকে স্বাগতম জানাই।

সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

সৌরজগতের গ্রহদের কথা


হাজার বছর আগে সভ্যতার আদিকালেই মানুষ গ্রহ-নক্ষত্র ও তারাদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। আসলে হয়েছে বললে ভুল হবে। মানুষকে গ্রহ নক্ষত্রের সঙ্গে পরিচিত হতে হয়েছে। তখন তো আর এত শত যন্ত্রপাতি ছিল না। তারারাই সেসময় মানুষের জন্য দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করত। নিজেদের প্রয়োজনেই তাই মানুষ পৃথিবীর বাইরে বস্তুজগৎ সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। সেই চেষ্টা বৃথা যায়নি বলতে হবে। কারণ, মানুষ পৃথিবী ও তার আশেপাশের জগৎ সম্পর্কে এখন অনেক কিছুই জেনে ফেলেছে। যেমন, পৃথিবীর চারপাশে আরও ৭টি গ্রহ পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ, সৌরজগতে মোট গ্রহ ৮টি। এরা সূর্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আকৃতির কক্ষপথে ঘুরছে। সবাই যখন অনেক কিছু জেনেই ফেলেছে আমরাই বা পিছিয়ে থাকব কেন? চল জলদি জলদি আমরাও জেনে নেই সৌরজগতের গ্রহগুলো সম্পর্কে মজার সব তথ্য।


বুধ:

বুধ বেশ ছোট একটি গ্রহ। সূর্যের সবচেয়ে কাছে এর অবস্থান। বুধের উপরিভাগ একদম খানাখন্দে ভর্তি। মরুভূমির মতো দেখতে।
> বুধের উপরের অংশ দেখতে অবিকল চাঁদের পৃষ্ঠের মতো।
> সূর্যের এত কাছে থাকায় বুধের তাপমাত্রা ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। কল্পনা করা যায়? ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আমাদের কী খারাপ অবস্থাই না হয়!
> সূর্যের তাপে ও আকর্ষণে বুধের বায়ুমণ্ডল উড়ে গেছে।
> বায়ুমণ্ডল না থাকায় বুধ তাপ ধরে রাখতে পারে না। রাতের তাপমাত্রা মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও হয়ে যায়।
>বুধে কিন্তু পানি নেই। তাই প্রাণের বিকাশের সম্ভাবনাও এখানে নেই।
শুক্র:
আকারের দিক দিয়ে শুক্রের সঙ্গে পৃথিবীর অনেক মিল আছে। কিন্তু এ মিল শুধু চেহারার মিল। স্বভাব কিন্তু পুরাই গড়মিল। গ্রহটির আবহাওয়া মোটেও পৃথিবীর মতো নয়।
>শুক্রের বায়ুমণ্ডল প্রধানত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসে গঠিত। মানে হল শুক্রকে আপন ভেবে সেখানে শ্বাস নিয়েছ তো মরেছ!
>আকারে এটি পৃথিবীর চেয়ে সামান্যই বড়।
> শুক্রের অভিকর্ষ বল পৃথিবীর মতো। জান তো, কোনো গ্রহ তার আশেপাশের যে কোনো কিছুকে যে শক্তিতে আকর্ষণ করে তাকেই অভিকর্ষ বলে।
> শুক্রের মেঘ ভীষণ পুরু। সূর্যের আলোর বেশিভাগ অংশ এর মধ্যে দিয়ে যেতে পারে না। এই আলো তখন তাপে রূপান্তরিত হয়। তাই শুক্র পরিণত হয়েছে সৌরজগত এর সবচেয়ে উত্তপ্ত গ্রহে। এর তাপমাত্রা ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর কাছাকাছি। এই তাপমাত্রায় টেলুরিয়াম নামক ধাতুও গলে যাবে অনায়াসেই!
> কোনো পানি নেই শুক্রের পৃষ্ঠে।
মঙ্গল:
মঙ্গলগ্রহকে প্রায়ই Red Planet  নামে ডাকা হয়। পৃথিবী থেকে অল্প দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায় ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের জন্য সম্ভাব্য স্থান এটাই।
> এ গ্রহের নাম লাল গ্রহ হওয়ার একটি কারণ হল মরিচা রঙের ধুলা, যা গ্রহটিকে ঢেকে আছে।
> মঙ্গলে ভয়াবহ ধূলিঝড় হয়। এর দিক মুহূর্তেই পাল্টে যায়। তাই পথ হারাতে কারও একমিনিটও লাগবে না।
> মঙ্গলে দানবীয় আকারের আগ্নেয়গিরি আছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল ‘অলিম্পাস মন্স’। এর উচ্চতা ২১ কিলোমিটার। তিনটা মাউন্ট এভারেস্টকে জোড়া দিলে এই উচ্চতা পাওয়া যাবে।
> মঙ্গলের পাতলা বায়ুমণ্ডল কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসে তৈরি। মানে মরার সম্ভাবনা এখানেও কম নয়।
> এর তাপমাত্রা মাইনাস ১২০ ডিগ্রি থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে ওঠানামা করে।
> মঙ্গলের বুকে খাল, উপত্যকা ও সমভূমি দেখা যায়। এ থেকে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে মঙ্গলে একসময় হয়ত তরল পানি ছিল।
বৃহস্পতি:
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। এর Red Spot আর গ্যাস ঝড়গুলো ঈর্ষা জাগানোর মতো। আমাদের পৃথিবীর মতো বৃহস্পতিরও চাঁদ আছে। তবে তা সংখ্যায় একটি নয় বরং অনেক।
> বৃহস্পতি আকারে এত বড় যে এটি যদি ফাঁপা বল হত, তবে ১ হাজার ৩০০টি পৃথিবী এর মধ্যে এঁটে যেত।
> মারাত্মক বিষাক্ত গ্যাসের ঘন রঙিন মেঘ বৃহস্পতিকে ঘিরে রাখে।
> তুমি যদি স্পেসশিপ নিয়ে বৃহস্পতিতে নামতে পার, তবে দেখতে পাবে যে পাতলা আর শীতল বাতাস ধীরে ধীরে ভারী আর গরম হয়ে যাচ্ছে। ১ হাজার কিলোমিটার নিচে বৃহস্পতির প্রবল আকর্ষণে এ গ্যাস তরল হয়ে যায়।
> বৃহস্পতিতে তোমার ওজন পৃথিবীর ওজনের আড়াই গুণ হয়ে যাবে। এখানে জেনে রাখ, ওজন আর ভর কিন্তু এক নয়। কেজি বা পাউন্ডে তোমরা নিজেদের যে পরিমাণ মাপ, সেটা হচ্ছে ভর আর ওজন হল তোমার ভর গুণ অভিকর্ষজ ত্বরণ। এ ত্বরণের মান বৃহস্পতিতে পৃথিবী থেকে আড়াইগুণ বেশি।
শনি:
চমৎকার সুন্দর গ্যাসীয় বলয় থাকাতে শনিকে সৌরজগতের সবচেয়ে সুন্দর গ্রহ বলা যায়।
> শনি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ।
> এর কেন্দ্র পাথুরে পদার্থ দিয়ে তৈরি।
> বলয়গুলো হাজার কিলোমিটার দূরত্ব রেখে শনিকে ঘিরে আছে।
>লক্ষ লক্ষ বরফের টুকরায় এ বলয়গুলো তৈরি।
> শনির ঘনত্ব বেশ কম।
> শনির বুকে মাঝেমাঝেই ঝড় বয়ে যায় ঘণ্টায় ৮০০ মাইল বেগে।
ইউরেনাস:
অন্যান্য গ্রহের তুলনায় ইউরেনাস কিছুটা ভিন্ন। এর রঙ রাজকীয় নীল-সবুজাভ। অন্যান্য সব গ্রহ লাটিমের মতো ঘোরে, কিন্তু ইউরেনাস ড্রামের মতো গড়িয়ে চলে।
> টেলিস্কোপ-এর সাহায্যে আবিষ্কৃত প্রথম গ্রহ ইউরেনাস।
> সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ৮৪ বছর।
> ইউরেনাস এর বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন গ্যাসের আধিক্য। তবে প্রচুর মিথেন গ্যাসও পাওয়া যায়। এই মিথেনই ইউরেনাস এর ব্যতিক্রমী রঙ এর জন্য দায়ী।
> মিথেনের ঘোলাটে আবরণের তলায় আসলে কী আছে? এর উত্তরে বিজ্ঞানীরা ধারণা পোষণ করেছেন যে হাইড্রোজেন-মিথেনের এ মেঘের পিছনে উত্তপ্ত এক সাগর আছে। এ সাগরে পানির সঙ্গে আছে অ্যামোনিয়া।
নেপচুন:
সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরের গ্রহটি হল নেপচুন। বেশ শীতল এ গ্রহটিতে অতি দ্রুত বায়ুপ্রবাহ হয়।
> নেপচুন আকারে বেশ বড়, পৃথিবীর চারগুণ।
> এর উপরিভাগে সবসময় ঝড়-তুফান চলতে থাকে। পৃথিবীর হারিকেন এর তুলনায় এর বেগ ১০ গুণ বেশি।
> নেপচুনের বায়ুমণ্ডলও ইউরেনাস এর মতো নীলাভ-সবুজ। কারণটাও একই। মিথেন গ্যাসের আধিক্য।
> পাতলা সাদা মেঘ গ্রহটিকে ঘিরে আছে।
অবস্থানের বিচারে এই গ্রহগুলোই আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। অনেক বছর ধরে প্লুটো নামের একটি গ্রহ ছিল সৌরজগতে। কিন্তু ইদানীংকালে বিজ্ঞানীরা গ্রহের তালিকা থেকে প্লুটোর নাম বাদ দিয়েছেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞান বলে একটা জ্ঞানের শাখা আছে, যা এসব মহাজাগতিক বস্তু নিয়ে আলোচনা করে। বড় হয়ে তোমরা জ্যোতির্বিজ্ঞান পাঠ করে এ বিষয়ে আরও অনেক কিছু জানতে পারবে।