ভবিষ্যত প্রযুক্তি কেমন হবে তা নিয়ে যেমন অতীতেও মানুষ অনেক কিছু তেমনি বর্তমানেও মানুষ অনেক কিছু চিন্তা করছে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজও করে চলেছে। আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব এমন ৬টি প্রযুক্তির কথা যে গুলি মানুষ অদূর ভবিষ্যতেই দেখতে পাবে। তাহলে চলুন পরিচিত হয়ে নেওয়া যাক সেই ৬টি অদূর ভবিষ্যতের প্রযুক্তির সাথে।
পানির নিচে শ্বাসপ্রশ্বাস চালাবার জন্য সকল মাছ ব্যাবহার করে ফুলকা আর মানুষ বাতাসে শ্বাসপ্রশ্বসের জন্য ব্যাবহার করে ফুসফুস। আর দৈহিক গঠনের এই পার্থক্যের কারনেই যেমন মাছ পানির বাইরে বেঁচে থাকতে পারে না, তেমনি মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না পানির নিচে। কিন্তু মানুষের এই বাঁধা মনে হয় খুব শীগ্রই দূর হতে চলেছে। ইস্রাইলের বিজ্ঞানী "এলোন বডনার" (Alon Bodner)" এমন এক প্রযুক্তি আবিস্কার করেছেন যে প্রযুক্তিতে খুব সহজেই পানি থেকে অক্সিজেনকে আলাদা করা সম্ভব।
LikeAFish এর কার্যপ্রনালী
তিনি এই প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন "LikeAFish"। তার এই প্রযুক্তি কাজ করবে ঠিক মাছের ফুলকার মত। অর্থাৎ পানির নিচে যেয়ে আপনার অক্সিজেনের ট্যাঙ্ক খালি হয়ে যাবার কোন সম্ভাবনাই থাকবে না, কেননা LikeAFish পানির মধ্য থেকে অক্সিজেরন আর নাইট্রোজেনকে আলাদা করে আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনিয় বাতাসের চাহিদা মিটাবে। এই প্রযুক্তি ১০০% সফল ভাবে কাজ করলেও এটি বেশ বড় আকৃতির হবার কারনে একে এখন পর্যন্ত সমুদ্রে পানির নিচে ব্যাবহার করা সম্ভব নয়, তবে খুশির সংবাদ হল এরই মধ্যে এই প্রযুক্তিকে অনেকটা ছোট আঁকার দেবার কাজ চলছে। আর সেটা যে এখন শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
০২) কৃষি রোবটঃ
রোবট প্রযুক্তিতে যে বর্তমান বিশ্ব অনেকটাই এগিয়ে গেছে বা যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে অনেক বড় বড় কলকারখানা সহ মহাশূন্যে অনেক জটিল কাজের ক্ষেত্রে ব্যাবহার হচ্ছে এই রোবট। আর কৃষি ক্ষেত্রেও এর ব্যাবহার একদম শুর হয় নাই তা কিন্তু না। কিছু কিছু জায়গায় পরীক্ষা মূলক ভাবে শুরু হয়েছে। আমেরিকার বষ্টোন শহরের কিছু কিছু ফার্মে রোবটকে পরীক্ষা মূলক ভাবে ব্যাবহার করা হচ্ছে। আগে যে কাজ মানুষের দ্বারা করানো হত এখন তার ৪০% কাজ করানো হচ্ছে রোবট দিয়ে। আবার জাপান এদিক দিয়ে একটু এগিয়ে। তারা এমন এক রোবট আবিস্কার করেছে যে বুঝতে পারে যে ষ্ট্রবেরি পেকেছে নাকি এখনও কাঁচা আছে। তবে বর্তমানে সফল ভাবে এই রোবট ব্যাবহার করছে আমেরিকার MIT (Massachusetts Institute of Technology)। তারা বিভিন্ন ভাবে এই রোবট ব্যাবহার করছে আর তাদের উন্নতি ঘটাচ্ছে। হয়ত খুব শীগ্রই দেখা যাবে ফার্মে কাজ করছে কৃষক রোবট। অবশ্য এক দিয়ে ভাল ২৪ ঘন্টাই ফসলের যত্ন করার কেউ থাকবে জমিতে আর বেশী খাটাখাটনির জন্য নালিশও করবে না।
০৩) অতিবেগুনী রশ্মি প্রতিরোধক ঔষধঃ
সূর্যকে উপেক্ষা করে যেমন চলা সম্ভব না তেমনি এই সূর্য থেকে নির্গত অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবকেও উপেক্ষা করা সম্ভব না। আর এ কারনে অনেকেই ব্যাবহার করে থাকে বিভিন্ন ধরনের অতীবেগুনী রশ্মি প্রতিরোধক ক্রিম। কিন্তু আপনাকে যদি বলি এমন ঔষধ তৈরি হচ্ছে যা খেয়ে আপনি দিব্যি সূর্যের আলোর নিচে ঘুরে বেড়াতে পারবেন কিন্তু অতীবেগুনী রশ্মি আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। যদিও এখনও বাজারে এমন কোন ঔষধ নেই কিন্তু এই ঔষধ নিয়ে কাজ করছেন লন্ডনের King’s College এর শিক্ষক Dr. Paul Long। তিনি তিন বছর ধরে এই ঔষধ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর তিনি সফলও হয়েছেন। তবে বর্তমানে এই ঔষধ বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যাতে তা মানুষের জন্য কোন ক্ষতির কারন না হয়ে দাঁড়ায়। Dr. Paul Long এর মতে এই ঔষধ আগামী ৫ বছরের মধ্যেই বাজারে ছাড়া সম্ভব হবে।
০৪) কাগজের মত পাতলা কম্পিউটার এবং ফোনঃ
আচ্ছা আপনাকে যদি বলি যে আপনার কম্পিউটারটি কাগজের মত পাতলা হবে এমন কি তা কাগজের মতই গোল করে পেচিয়ে পকেটের মধ্যে রেখে দিতে পারবেন। কি ভাবছেন পাগলের প্রলাপ বকছি? না তা কিন্তু নয়। ২০১৩ এ অনুষ্ঠিত CES (Consumer Electronics Show) এ ক্যানাডা এবং আমেরিকার দু'টি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ ভাবে প্রথম বারের মত প্রদর্শন করল এই প্রযুক্তি। তারা তাদের প্রযযেক্টের নাম দিয়েছে "Paperphone"। Queens University এর শিক্ষক Dr. Roel Vertegaal এর মতে, "এটাই ভবিষ্যত, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই মানুষ এইরকম ফোন ব্যাবহার করতে এবং অনুভব করতে পারবে।"
০৫) দাঁতের পুনর্জন্মঃ
কথায় বলে, "দাঁত থাকতে, কেউ দাঁতের মর্ম বোঝে না"। কথাটা কিন্তু একদম সত্য যার দাঁত নেই, সেই বোঝে এর জ্বালা। আর কোন দূর্ঘটনায় যদি এই দাঁত আপনি হারিয়ে ফেলেন, তাহলে সেই দাঁত আর কোন দিন ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়, তখন ভরসা শুধু মাত্র নকল দাঁত। তবে তা শুধু দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাবার মত। যারা এরকম দাঁত হারিয়েছে তাদের জন্য সুখবর, তার আগে আপনাদের প্রকৃতির ভয়ংকর প্রানী কুমিরের একটা বিশেষ ক্ষমতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। কোন কারনে যদি কুমিরের দাঁত ভেংগে যায় বা পরে যায় তাহলে কুমিরের সেই দাঁত কিন্তু পুনঃরায় গজায়। আর নিয়েই বিজ্ঞানিরা শুরু করে দেয় গবেষনা। শেষমেষ ২০১২ সালে উথার বিজ্ঞানীরা ঘোষনা দেন যে মানুষের ষ্টিম সেল কে (Stem Cell) ব্যাবহার করে আর কুমিরের প্রক্রিয়ার সাথে সমন্বয় করে বর্তমানে তারা এমন পন্থা আবিস্কার করেছেন যার ফলে মানুষেরও দাঁতের পুনর্জন্ম সম্ভব। বর্তমানে পরীক্ষাগারে বিভিন্ন প্রানীর উপর পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। তবে মানুষের জন্য এই পদ্ধতি উন্মুক্ত হতে এখনও সময় লাগবে ৫ থেকে ১০ বছর।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
সম্পাদকঃ দুরন্ত নাঈম।