জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছাকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ।। জ্ঞানের সন্ধানে।। পেইজটি। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে। সর্বশেষে ।। জ্ঞানের সন্ধানে।। পেজ এর পক্ষ হতে আপনাকে স্বাগতম জানাই।

মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৭

অক্সিজেন আবিষ্কারকঃ জোসেফ প্রিস্টলি

১৭৩৩ সালে ব্রিটেনের গরিব তাঁতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ প্রিস্টলি। তিন বছর বয়সে মাকে ও সাত বছর বয়সে পিতাকে হারান প্রিস্টলি। বড় হয়ে ওঠেন ফুফুর কাছে। তার ফুফুর ইচ্ছা ছিল প্রিস্টলি বড় হয়ে ধর্মযাজক হবেন। পড়ালেখায় প্রিস্টলি খুব ভালো ছিলেন। অল্প দিনের মধ্যেই প্রিস্টলি ইংরেজি, ফরাসি, ইতালিয়ান, আরবি ও জার্মান ভাষা রপ্ত করেন। এরপর শিক্ষাজীবন শেষে ডিসেন্টার্স অ্যাকাডেমিতে প্রথমে ভাষার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলেও পরে তিনি রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা করেন। তার রসায়নের প্রতি আগ্রহ থেকেই শুরু করেন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা।



এরপর বিজ্ঞানী বেনজামিন ফ্র্যাংকলিন প্রিস্টলিকে পরামর্শ দেন তড়িৎবিজ্ঞানের ওপর বই লেখার জন্য। বই লিখতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন যে, কার্বন একটি বিদ্যুৎ সুপরিবাহী বস’। এ বিষয় নিয়ে তার বই লেখা শেষ হয় ১৭৬৫ সালে। তার বইয়ের নাম হলো তড়িতের ইতিহাস ও তার বর্তমান অবস্থা। বইটি বেশ সুনাম অর্জন করেছিল। এ সময় প্রিস্টলির বয়স ছিল ৩২ বছর। এই বই প্রকাশের পর বছর তিনি রসায়ন সোসাইটির সদস্য মনোনীত হন।

তিনি যেখানে বাস করতেন তার বাসার পাশেই একটি মদের কারখানা ছিল। মদের গন্ধ থেকেই তিনি নতুন চিন্তায় মগ্ন হন। একদিন প্রিস্টলি বাড়িতে গবেষণার সময় একটি পাত্রে ক্যালসিয়াম কার্বনেট বা খড়িমাটি নিয়ে তাতে সালফিউরিক অ্যাসিড মিশ্রিত করলেন। পাত্রের মুখে একটি কাচের নল লাগানো ছিল। তিনি লক্ষ করলেন যে, নলের মুখ দিয়ে কী এক ধরনের গ্যাসীয় পদার্থ বের হলো। আর এটিকে প্রিস্টলি নাম দিলেন ‘সি’র বায়ু’। কারণ তখনকার দিনে সব গ্যাসীয় পদার্থকে বায়ু বলা হতো। আসলে এটিই ছিল কার্বনডাই অক্সাইড।

বায়ু নিয়ে গবেষণা করতে করতে তিনি একে পানির মধ্য দিয়ে পরিচালিত করে আবিষ্কার করেন সোডা ওয়াটার। বর্তমান সময়ের কোকাকোলা, ফানটা, সেভেনআপ, পেপসি, আরসি প্রভৃতি প্রিস্টলির সোডাওয়াটার দিয়েই তৈরি। সোডা ওয়াটার তৈরি করার জন্য রয়্যাল সোসাইটি প্রিস্টলিকে ‘কেপলে পদক’ প্রদান করে।

অক্সিজেন আবিষ্কার : প্রিস্টলির জীবনের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার অক্সিজেন। ১৭৭৪ সালের ১ আগস্ট প্রিস্টলি নিজের ঘরে বসে গবেষণা করছিলেন। একটি পাত্রে কিছু সালফিউরিক অক্সাইড নিয়ে উত্তপ্ত করছিলেন। এক সময় পাত্রটি থেকে এক প্রকার গ্যাসীয় পদার্থ বের হতে লাগলো। তিনি এই গ্যাসটি একটি পাত্রে সংরক্ষণ করলেন। দেখতে পেলেন এই বায়ুর মধ্যে কোনো জ্বলন- মোমবাতি প্রবেশ করালে তা আরো সতেজ হয়ে উঠছে। প্রিস্টলি অক্সিজেন আবিষ্কার করলেও এর নাম দেন ফরাসি রসায়নশাস্ত্রবিদ লরা ল্যাভয়সিয়ে। প্রিস্টলি একসময় ল্যাভয়সিয়ের সাথে দেখা করেন এবং ল্যাভয়সিয়ে এটি পরীক্ষা করে দেখেন তারপর এর নাম দেন অক্সিজেন। এ ছাড়া প্রিস্টলি কার্বন মনোক্সাইড,অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট অক্সাইড, নাইট্রোজেন ও সালফার ডাই অক্সাইডের আবিষ্কারক।

প্রিস্টলি গবেষণাগারে আবিষ্কার করেন কার্বন মনোক্সাইড। এখানেই তার ছেলে ও স্ত্রীর মৃত্যু হয়। স্ত্রী ও ছেলের অকাল মৃত্যুতে পিস্টলি ভেঙে পড়েন। অবশেষে ১৮০৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি পরলোকগমন করেন।

কোন মন্তব্য নেই: