ছোট্ট পিঁপড়া থেকে বড় বড় হাতি-- কত প্রাণীই তো তুমি দেখেছ আজ পর্যন্ত। হয় বাড়িতে নাহয় চিড়িয়াখানায়। রোজই তোমার চারপাশে ঘিরে থাকে কত অদ্ভুত অদ্ভুত প্রাণীরা। সেগুলোর কোনো কোনোটাকে আবার খালি চোখে দেখাও যায় না। ওদের সবাইই মাটিতে হাঁটে। ঠিক তোমার মতো। কিন্তু এমন কোনো প্রাণী কি দেখেছ, যারা পানির উপর দিয়ে হাঁটে? শুনতে অদ্ভুত হলেও কথাটা সত্যি। সত্যিই পৃথিবীতে এমন অনেক প্রাণী আছে, যারা কিনা শুধু মাটিতে না, পানির উপরও হাঁটতে পারে খুব সহজে। আর ছোট্ট মাকড়সা থেকে শুরু করে বড় জীবজন্তুসহ এই তালিকায় রয়েছে কেবল একটা দুটো না, প্রায় ১ হাজার ২০০ প্রাণীর নাম। আর এ রকমই কিছু পানির উপরে হাঁটতে পারা প্রাণীর গল্প শোনো।
পিঁপড়া
প্রতিদিনই তো কত পিঁপড়া দেখ। কত বিরক্তই
না হও ওগুলো চুপটি করে এসে যখন কামড়ে দেয় তোমাকে। বড্ড রাগ হয়। তবে এই
পিঁপড়াগুলোকেই আবার খুব ভালো লাগে যখন ওরা তোমাকে সাহায্য করে মায়ের লুকিয়ে
রাখা মিষ্টির প্যাকেটটা খুঁজে বের করতে। তখন হয়ত ভাব কত্ত ভালো পিঁপড়েরা।
কত্ত সহজেই মিষ্টির খোঁজ করে ফেলতে পারে। কিন্তু তোমরা কি জান, মিষ্টির
খোঁজ দিতে পারা ছাড়াও আরও একটা জিনিস করতে পারে ওরা। ওদের আরেকটা গুণ আছে।
আর সেটা হল ওরা খুব সহজেই পানির উপরে হাঁটতে পারে। এমনিতে পিঁপড়াদের
সাঁতারের কথা সবাই জানে। কিন্তু কিছুদিন আগে জানা গেছে শরীরের খুব অল্প
ওজনের কারণে পিঁপড়ারা কেবল পানিতে সাঁতরাতেই না, বরং পানির উপর শুয়ে-বসে
থাকতে বা হাঁটতেও পারে।
পানিপোকা
পৃথিবীতে প্রায় ৩৪০ প্রজাতির পানিপোকা
আছে, যারা কিনা খুব সহজেই পানির উপর হাঁটতে পারে। এরমধ্যে আছে কিছু
মাকড়সাও। ওদের জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যায় পানির উপরে। সারফেস টেনশন
বা পৃষ্ঠটান নামে একটা মজার ব্যাপার আছে। যেটার কারণে একটা ব্লেডকে যদি
পানির উপর ছেড়ে দাও, তাহলে সেটাও ভাসতে থাকবে। এই পানিপোকাদের ওজন সেই
সারফেস টেনশনের কোনো রকমফের করে না। তাছাড়া এই পোকাদের পা ভরা থাকে আঠালো
সব লোমে। তাই এই পোকারাও পানির উপর হাঁটতে পারে।
মাছ-মাকড়সা
উত্তর আমেরিকায় পাওয়া মাকড়সাদের
মধ্যে সবচেয়ে বড় মাকড়সা হল এই ফিশিং স্পাইডার বা মাছ মাকড়সা। ওরা পুকুর বা
ডোবা-নালায় থাকে এবং পোকামাকড় খায়। আর এই পোকামাকড় ধরতে তাদের সাহায্য করে
পানির কাঁপুনি। পানি কাঁপলেই ওরা বুঝতে পারে যে শিকার আসছে। অন্যদের মতো
এরা কেবল পানির উপর হাঁটতেই জানে না, পানিতে দাঁড়ও বায়। ওদের পায়ের
আগানো-পিছানো দেখেই বোঝা যায়, ওরা হাঁটছে না দাঁড় বাইছে। আর এই যে পানিতে
হাঁটতে পারা, এর পুরোটাই ওরা করে পায়ের জাদুর মাধ্যমে।
পিগমি গেকো
মাত্র ৪ সেন্টিমিটারের এই পোকাগুলো
খুব সহজেই ডুবে যেত পানির ভেতরে। কিন্তু প্রকৃতি ওকে শিখিয়ে দিয়েছে কী করে
বেঁচে থাকতে হয়। কী করে পানিতে না ডুবেও এটার উপর দিয়ে চলা যায়। শরীরের
অল্প ওজনই এদের চলতে সাহায্য করে পানির উপর। আর গায়ের চামড়াগুলো সাহায্য
করে সারফেস টেনশনকে না ভেঙে গড়গড় করে পানির উপর দিয়ে হাঁটতে।
বাসিলিস্ক গিরগিটি
পানির উপর দিয়ে অবলীলায় চলাফেরার ক্ষমতার জন্য আমেরিকার এই গিরগিটিগুলোকে যিশু খ্রিস্টও সম্বোধন করা হয়। এদের ওজন পানির সারফেস টেনশনকে অবশ্যই ভেঙে ফেলার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এরা পানির উপর এত দ্রুত নিজেদের পা ওঠায় আর নামায় যে সারফেস টেনশন ভেঙে পানিতে পড়ার আগমুহূর্তেই এরা সরে যায় সেখান থেকে। ফলে পানির উপরে হাঁটতেও এদের খুব একটা সমস্যা হয় না।
ওয়েস্টার্ন গ্রিবস
উত্তর আমেরিকার এই পাখিগুলোর
আছে ছোট্ট ছোট্ট দুটি পাখা আর শরীরের অনেক পেছনে দুটো শক্তিশালী পা।
শারীরিক গঠনই এদের পানিতে বাস করতে বাধ্য করেছে। বাসিলিস্ক গিরগিটির মতো
এরাও পানির উপরে এত দ্রুত হাঁটে যে ডুবে যাওয়ার সুযোগই পায় না। আর কেবল পা
নয়, পায়ের সঙ্গে সঙ্গে পানিতে চলার সময় এরা নিজেদের পাখনা দুটোকেও প্রচণ্ড
জোরে জোরে নাড়ায়। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে যে গ্রিবসরা প্রতি সেকেন্ডে মোট
২২ বার নিজেদের পাখা নাড়ায়।
ডলফিন
ডলফিনের মতন বড় প্রাণীরাও পানির উপর দিয়ে
হাঁটে। ডলফিন বিশেষজ্ঞ মাইক বোসলে মোট ২৫ বছর ধরে গবেষণা করেছেন ডলফিনদের
উপর। সম্প্রতি তার তথ্যচিত্র থেকেই পাওয়া যায় এ তথ্য। পানিতে চলার সময়
নিজেদের লেজকে খুব দ্রুত সামনে-পেছনে করার মাধ্যমে পানির উপর হাঁটতে সক্ষম
হয় ডলফিনরা। যদিও কেবল শিখিয়ে দেওয়া হলেই ওরা এ রকমটা করতে পারে।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।