আজকের লেখার শিরনাম পড়ে নিশ্চই চিন্তায়
পরে গেছেন, মানুষ হয়ে কেন এই প্রশ্ন করছি? বলছি কিন্তু তার আগে চলুন কিছু
আলোচনা করে নেই আপনাদের সাথে।
জীবন ধারনের জন্য আমরা সকলে খাদ্য গ্রহন করে থাকি। এই খাবার আমাদের শক্তি
যোগায় যা আমাদের জীবন ধারন করতে অনিবার্য। আমাদের খাবার সাধারত তিন
প্রকারের হয়ে থাকে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট বা চর্বি আর সব শেষে প্রোটিন।
আমরা প্রোটিনের জন্য প্রানী কুলের উপর নির্ভর করি। কেননা প্রোটিন শুধু
মাত্র মাছ অথবা মাংস থেকে পাওয়া সম্ভব। আমাদের এই খাবারের তালিকায় থাকে
নানা রকমের বিভিন্ন খাবার। আমরা বাঙ্গালী হিসেবে মাছে ভাতে হলেও বিশ্বায়নের
এই যুগে আমাদের জীবনে প্রবেশ করেছে বিদেশী বিভিন্ন রকমের খাবার। আর এর
সাথে আমাদের পছন্দের রোস্তারার তালিকায় উঠে এসেছে KFC, BFC, Pizza Hut এর
মত রোস্তারা। খাবারের মান এবং স্বাদ ভাল হওয়ায় তা খুব সহজেই জনপ্রিয় হয়ে
উঠেছে উচ্চবিত্ত সহ মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোতে। বর্তমানে প্রায় দেখা যায়
কিশোর কিশোরিরা তাদের জন্মদিন উপলক্ষে ট্রিট দেয় এসকল রোস্তারায়। বেশ মজা
করে আর আনন্দ করে কাটায় এসব জায়গায়। আর এসব রোস্তারার পরিবেশ ভাল হওয়ায় তা
জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কোন বিকল্প ছিল বলে মনে হয় না।
আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব "Foie Gras" নামে একটি খাবারের সাথে যা আমাদের
দেশে খুব একটি নাম না করলেও ফ্রান্সে এটি বেশ জনপ্রিয়। আপনারা নিশ্চই মনে
করছেন "Foie Gras" মানে কি, এর মানে "Fat Liver" যার বাংলা নাম করলে হয়
"মোটা কলিজা"। এই কলিজা খেতে দারুন সুস্বাদু। এটি হাসের কলিজা। ফ্রান্সের স্থানীয় সকল KFC তে এটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
হাঁসের কলিজাকে KFC এর লুকানো মসলা দিয়ে একে ভাজা হয়। লুকানো মসলা বললাম
কেন ভাবছেন? আসলে KFC তাদের রন্ধন প্রক্রিয়ায় যেসকল মসলা ব্যাবহার করে তা
তারা সব সময় লুকিয়ে রাখে। আর একারনেই KFC এর মত স্বাদ অন্য কোন রোস্তারায়
গেলে পাওয়া যায় না।
আর এ জিনিষটি আলাদা করে রেখেছে তাদের অন্য সকল রোস্তারা থেকে KFC কে।
এখন মূল বিষয়ে ফেরা যাক। KFC তাদের খাবারের মধ্যে যে ধরনের বড় আকৃতির কলিজা
ব্যাবহার করে তা সাধারনত কোন হাঁসের প্রাকৃতিক উপায়ে হয় না। এটি করার জন্য
কিছু অমানবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় হাঁস গুলিকে। তাহলে আসুন দেখে
আসি কি কি উপায়ে হাঁসের এই কলিজাকে বড় করা হয়।
প্রথমে যে ছবিটি দেখাছেন এটির মাধ্যমে হাঁস গুলিকে খাওয়ানো হয়। এগুলি বেশ
লম্বা যা কিনা সরাসরি হাঁসের পেটের মধ্যে চলে যায়। মানে গলা দিয়ে ঢুকিয়ে
সরাসরি পাকস্থলির মধ্যে খাবার চালান করে দেওয়া হয়। আর পিছনে যে পাইপ দেখছেন
তার মাধ্যমে খাব গুলিকে প্রেসার দিয়ে সামনের দিকে ঠেলা দেওয়া হয়। এটি একটি
অত্যাধুনিক উপায়।
হাঁসের খেতে ইচ্ছা করছে কি করছে না তার ধার ধারে না এরা। একটু সময় পর পর জোড় করে মুখের মধ্যে ঠেসে ধরে খাইয়ে দেয়।
আমারা যদি আমাদের দেশের হাঁস গুলির কথা একবার মনে মনে চিন্তা করি তাহলে
আমাদের মানষ পটে ভেষে ওঠে পুকুর বা খালের মধ্যে সাঁতার কেটে চলা এক ঝাক
হাঁসের পালের কথা। কিন্তু এরা এতই হতভাগা যে পুকুর তো দূরের কথা এরা ঠিক মত
হাটার সুযোগটুকু পায় না তাদের ছোট জীবন কালে।
এদের একটি শিকের তৈরি খাঁচার মধ্যে স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়
যাতে এরা নূন্যতম নড়াচড়া করতে পারে না। কেননা নড়াচড়া করলেই ক্যালরি নষ্টো
হবে ফলে হয়তো আশা অনুরূপ বড় কলিজা টুকু পাওয়া সম্ভব হবে না। আর এ কারনে এই
চঞ্চল হাঁস গুলিকে একটি স্থির জীবন বেছে নিতে বাধ্য করা হয়।
তাদের এই দীর্ঘ দাড়িয়ে থাকার ফলে তাদের পা ফুলে ওঠে। অনেক কষ্টো সহ্য করে
বেঁচে থাকতে হয় এই ক্ষীন জীবি হাঁস গুলিকে। হয়তো এরা প্রতি নিয়ত মহান
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, "আমাকে মৃত্যু দেও"। একটি বার চিন্তা করে
দেখেন কেমন জীবন হত আপনার যদি এরকম স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা লাগতো আপনার।
দাঁড়িয়ে যে একটু বিশ্রাম নিবে তারও যে ফুসরত নেই। সময় হয়ে গেছে, ক্ষিদে
লাগুক আর না লাগুক এখনই বর একটি পাইপ মুখ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে তাদের
খাওয়ানোর জন্য। মুখ খুলতে না চাইলে সমস্যা নেই মানুষের হাতের শক্তির কাছে
হাঁসের মুখ বন্ধো করে রাখা যে বৃথা প্রতিবাদ জানানো মাত্র।
অনেক সময় দেখা যায় যে বেশী বেশী খাবার খাওয়ানোর ফলে অনেক হাঁস মানুষের
খাবারে পরিনত হওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরে। হয়তোবা আপনার মন থেকে এখন এ
কথা বেড়িয়ে আসছে " মরেছে বেঁচে গেছে", আসলেই এই কষ্টো সহ্য করার থেকে হয়তো
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা অনেক শান্তির।
এখন আপনাদের আরেকটি দৃশ্য দেখাই। সকলে দেখতে পারছেন হাঁসের পিছন দিক থেকে
রক্ত পরছে, মানে হাঁসের মল দ্বার থেকে রক্ত। জানেন কেন এরকম হয়েছে? হাঁসের
মুখ দিয়ে যখন জোর করে খাবার ঢুকানোর ফলে তাদের পেটের ভিতরের খাবার গুলা
অনেকটা বাধ্য হয় মল দ্বার থেকে বেরিয়ে আসতে। আর যেহেতু এটা প্রাকৃতিক কোন
বিষয় না তাই এটি পরিপাক যন্ত্রকে অনেকটা ক্ষতবিক্ষত করে বেরিয়ে আসে। আর এর
ফলে ঘটে রক্ত ক্ষরন। এভাবেই বেঁচে থাকার শেষ দিন পর্যন্ত তাদের বরন করে
নিতে হয় সীমাহিন কষ্টো।
হাঁস গুলি এত কষ্টো সহ্য করল আর তাদের কলিজা বড় না হয়ে পারে বলুন! উপরের
ছবিটির ডান দিকে একটি সুস্থ হাঁসের কলিজা যার রঙ সাভাবিক ভাবেই চকলেটের মত
আর বাম দিকে রয়ে কষ্টো বেদনায় বেঁচে থাকা হাঁসের কলিজা যা অনেক বড় এবং সাদা
রঙের হয়ে থাকে।
আরে এই সাদা কলিজা আবার KFC এর লুকানো মসলার সাথে যোগ করে বানানো হল "Foie
Gras", হুম নিশ্চই অনেক সুস্বাদু। তা না হলে নিশ্চই এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠতো
না।
এখন অনেকেই বলবেন, "হাঁসের মাংস খাওয়ার জন্য তা খাব না!!" আমি আবার কখন
বললাম খাবেন না বা আমি খাব না। হালাল খাবার গ্রহন করার মধ্যে কোন অসুবিধা
আছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু আমি যে কথাটি বুঝাতে চেয়েছি তা হল, আমাদের
বেঁচে থাকার জন্য বা প্রোটিনের জন্য মাংস, মাছ এগুলার বিকল্প নেই তবে হ্যাঁ
উদ্ভিত খাবারের মধ্যে একমাত্র ডালে ( অন্য কিছু আবার ভেবে নিবেন না )
প্রোটিন আছে তবে আমরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই মাংস বা মাছের উপর নির্ভরশীল।
আমাদের প্রোটিনের যোগার দিতে যে সকল প্রানি তাদের প্রান দিয়ে থাকে তাদের
উপর অত্যাচার না করে তাদের সাধারন উপায়ে আমরা মেরে খেতে পারি। এরকম কষ্টো
দিয়ে তাদের মারারতো কোন কারন হয় না।
বাংলাদেশের KFC ম্যানুতে এটি আছে কিনা জানি না! তবে যদি থেকে থাকে আমি এই
খাবার জীবনেও খেতে পারব না। কারন যত বার এই খাবার খেতে যাব হয়ত এই হাঁস
গুলির কষ্টের কথা মনে পরে যাবে। আর মনে হয় না তাহলে এই খাবার আমার গলা দিয়ে
নামানো সম্ভব হবে।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।