জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছাকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ।। জ্ঞানের সন্ধানে।। পেইজটি। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে। সর্বশেষে ।। জ্ঞানের সন্ধানে।। পেজ এর পক্ষ হতে আপনাকে স্বাগতম জানাই।

শুক্রবার, ৯ মে, ২০১৪

অতীত থেকে বর্তমানে কম্পিউটার


কম্পিউটার কি? কম্পিউটারের ইতিহাস জানার আগে একটু ধারণা নেই কম্পিউটার সম্পর্কে। Computer শব্দটি গ্রিক শব্দ Compute শব্দ থেকে এসেছে। শব্দের অর্থ গণনা করা। Computer শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। মূলতঃ এটি তৈরি করা হয়েছিল গণনার জন্য। কিন্তু বর্তমান আবস্থায় এটি জটিল ও কঠিন হিসাব নিকাশ ছাড়াও আরো অনেক কাজে ব্যবহার হচ্ছে কম্পিউটার। কম্পিউটারের কাজের গতি হিসেব করা হয় ন্যানো সেকেন্ডে। ন্যানো সেকেন্ড হল এক সেকেন্ডের একশ কোটি ভাগের একভাগ। ইলেকট্রনিক প্রবাহের মাধ্যমে এটি তার যাবতীয় কার্য সম্পাদন করে।কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেন এবং কিভাবে? মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন, দিয়েছেন তাদের মাথায় কিছু বুদ্ধি।মানুষ সাধনা করে তার বুদ্ধির মাধ্যমে বিভন্ন জিনিস আবষ্কার করছে। বর্তমান যুগ কম্পিউটারের যুগ। এখ আপনাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে কম্পিউটার আবিষ্কার কে করেছেন? তাহলে আপনি এর উত্তর কি দিবেন? কারণ আজকের এই কম্পিউটার একজনের হাত ধরে আসেনি। এটি এসেছে অনেক অনেক মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে। এর জন্যই আপনাকের জানতে হবে এর প্রথম দিক থেকে ইতিহাস।ইতিহাস থেকে যা জানা গেছে তা হল, প্রায় ৪ হাজার বছর আগে চীনারা গণনা করার জন্য একটি যন্ত্র তৈরি করে। যার নাম ছিল অ্যাবাকাস।এটিই হল পৃথিবীর প্রথম গণনাকারি যন্ত্র। আর এটিই হল বর্তমান কম্পিউটারের পূর্বপূরুষ।

পৃথিবীর প্রথম গণনাকারি যন্ত্র
মুলতঃ বর্তমান কম্পিউটারের রূপরেখা তৈরি করেন ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ। ১৮২২ সালে তিনি লগারিদমসহ গাণিতিক হিসাব নিকাশ অধিক সহজ করার লক্ষ্যে একটি যন্ত্র তৈরি করার পরিকল্পনা হাতে নেন। যন্ত্রটির নাম ছিল “ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine). তার এই যন্ত্রটি কিছু সমস্যার কারণে তৈরি করা সম্ভব হয় নি। এরও অনেক পরে ১৮৩৩ সালে তিনি আগের সব গণনাকারি যন্ত্রের স্মৃতিভান্ডারের প্রয়োজনীতা অনুভব করেন।  এইজন্য তিনি একটি যন্ত্র তৈরির চিন্তা করেন, যার নাম দেন “অ্যানালটিক্যাল মেশিন”। এটির কাজ তিনি শেষ করতে পারেন নি। তার এই মেশিনের ডিজাইনের উপর ভিত্তি করেই আজকের এই কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছে। এই জন্যই তাকে কম্পিউটারের আদি পিতা বা জনক বলা হয়। তার পরে লেডি আড্যা আগাষ্টা, ফ্রাঙ্ক বন্ডইউন সহ আরো অনেকে এগিয়ে নিয়ে যান চার্লস ব্যাবেজের উক্ত কাজকে।
 
চার্লস ব্যাবেজ
চার্লস ব্যাবেজ১৮৮৭ সালে ডঃ হরম্যান হলেরিথ যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারির কাজে ব্যবহারের জন্য ইলেকট্রো মেকানিক্যাল ব্যবস্থায় পাঞ্চকার্ডের সমন্বয়ে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এর দ্বারা দ্রুত আদমশুমারির কাজ করা যেতো। ১৮৯৬ সালে তিনি এ যন্ত্র তৈরির জন্য হলেরিথ টেবুলেটিং মেশিন কোম্পানী নামে একটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে আরো কয়েকটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এই কোম্পানীগুলো একত্রে তৈরি হল বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন কর্পোরেশন (IBM)


IBM যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক হাওয়ার্ড এইচ. আইকেন IBM এর চারজন প্রকোশলীর সহযোগিতা তৈরি করা হয় প্রথম স্বয়ংক্রিয় সাধারণ ইলেকট্রোমেকানিক্যাল ডিজিটাল কম্পিউটার Mark-1 (১৯৪৪ সালে)। এটি ছিল প্রায় লম্বায় ৫১ ফুট, উচ্চতায় ৮ ফুট। এতে ৭ লক্ষাধিক যন্ত্রপাতির জন্য প্রায় ৫০০ মাইল লম্বা তার ব্যবহার করা হয়েছিল। এর ওজন ছিল ৫ টন, এটি চালু ছিল ১৫ বছর। বর্তমানে এটি হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান জাদুঘরে আছে।
MARK-1
MARK-1
ENIAC
১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ জন মউসলি এবং তার ছাত্র প্রেসপার একার্ড মিলে তৈরি করেন প্রথম প্রজন্মের ডিজিটাল কম্পিউটার ENIAC। এটি ছিল অত্যান্ত বড় ও ওজনে ছিল প্রায় ৩০ টন। এটি প্রতি সেকেন্ডে ৫০০০ যোগ বিয়োগ করতে পারত।

ENIAC
ENIAC১৯৪৬ সালে হাঙ্গেরীয় গণিতবিদ জন ভন নিউম্যান (John Von Neuman) সংরক্ষিত প্রোগ্রাম ধারণাটি উদ্ভাবন করেন। তিনিই প্রথম কম্পিউটারের “তথ্য ও নির্দেশ” সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করেন। তার এই ধারনার উপর ভিত্তি করে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মরিশ উইলকশ (Maurice Wikes) ১৯৪৬ সালে EDSAC (Electronic Delay Storage Automatic Computer)  নামে সর্বপ্রথম স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক্স ডিজিটাল কম্পিউটার তৈরি করেন।
EDSAC
EDSAC
EDVAC
ভন নিয়ম্যানের নীতিকে কাজে লাগিয়ে EDSAC তৈরির আগেই ENIAC এর নির্মাতা জন মউসলে ও জে. প্রেসপার একার্ট ENIAC নামে কম্পিউটার তৈরিতে নিয়োজিত ছিলেন। এর মধ্যে তারা একটি কোম্পানী তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন যার কারণে কম্পিউটারটি তৈরি করতে দেরি হয়। ১৯৫০ সালে তারা EDVAC (Electronic Discrete Variable Automatic Computer) তৈরি করেন।
এরপর জন মউসলে ও জে. প্রেসপার একার্ট নিজেদের কোম্পানীতে ১৯৫১ সালের মার্চ মাসে UNIVAC-1 (Universal Automatic Computer) তৈরি করেন। এটিই হল সর্বপ্রথম তৈরিকৃত বানিজ্যিক ইলেকট্রনিক কম্পিউটার। এতে ক্রিষ্টাল ডায়োড স্যুইচ ও ভ্যাকুয়েম টিউব সার্কিট ব্যবহার করা হয। এটি এক সাথে পড়া, তথ্য লেখা ও গণনা করতে পারত। প্রথম UNIVAC-1 টি সরবারাহ করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Bureau of Census অফিসে, দ্বিতীয়টি বিমান বাহিনীতে, তৃতীয়টি আর্মি ম্যাপ সার্ভিস অফিসে। ১৯৫৩ সালে আইবিএম IBM701 নামক একটি বানিজ্যিক কম্পিউটার তৈরি করে। এই সময়ে প্রোগ্রাম রচনা করা হতো বাইনারি ভাষা ব্যবহার করে।
 
UNIVAC-1
UNIVAC-1
IBM701
১৯৪৮ সালে ট্রানজিষ্টর আবষ্কারের ফলে বালব এর পরিবর্তে ট্রানজিষ্টার ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যবহারের ফলে কম্পিউটার ধীরে ধীরে আকারে ছোট হতে থাকে। এই কম্পিউটার গুলো ছিল আগেরগুলো থেকে উন্নত, দ্রুত গতিময় ও টেকসই। ১৯৬৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাটমাউথের দু’জন অধ্যাপক J. G. Kemeny এবং Tomas Kurtz এরই মধ্যে বেসিক নামে একটি প্রোগ্রাম রচনা করেন। এ ভাষায় প্রোগ্রাম লেখা অত্যান্ত সহজ হয়ে পড়ে। যার কারণে এটি খুবই জনপ্রিয়তা পায়।
ট্রানজিষ্টার আবিষ্কারের পরে আবিষ্কার হয় IC (Integrated Circuit). সিলিকনের একটি ক্ষুদ্র অংশে একাধিক ট্রানজিষ্টার একত্র করে এটি তৈরি করা হয়। আইসি ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারগুলা আকারের একদম ছোট হয়ে গেল, তার সাথে বেড়ে গেল গুণগত মান ও দ্রুততর হল কাজের গতি।

IC
IC
কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কারের ফলে। ১৯৭১ সালে আমেরিকার ইন্টেল কোম্পানি সর্বপ্রথম মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocessor) তৈরি করে। এটি এক বর্গ ইঞ্চি মাপের সিলিকন পাতের হাজার হাজার ট্রানজিষ্টারের একটি যন্ত্রাংশ। এর ফলে কম্পিউটার হয়ে যায় একটি টেলিভিশনের মতো্। এতে কম্পিউটারের দাম চলে আসে হাতের নাগালে, ব্যবহারের সুবিধা বেড়ে যায় ও কাজের ক্ষমতা বেড়ে হয় হাজার হাজার গুণ। এটি দিয়ে তৈরি কম্পিউটারই হল আজকের Personal Computer।

Microprocessor
Personal Computer
Personal Computer

লেখকঃ Duronto Pothik

কোন মন্তব্য নেই: